নিজস্ব প্রতিবেদক // রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র বাংলাদেশের মধ্যে থেকেও সংশ্লিষ্টরা যেন আলাদা কোন স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রে চাকুরী করছেন। সরকার ঘোষিত নীতিমালা ও নিয়মকানুন কোনটাই যেন তাদের মানতে হচ্ছে না। ওড়ানো হচ্ছে না স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজের জাতীয় পতাকা। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে কর্মরতরা নিজেদের ইচ্ছায় কর্মস্থলে আগমন ও প্রস্থান করেন।
কর্মরতদের স্বেচ্ছাচারিতা, জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করা, দায়িত্বে অবহেলা, সরকারী আদেশ না মানা, স্যাকমোর উপজেলা সদরে ভাড়া বাসায় থাকা, স্থানীয়দের সরকারী সেবা না দেয়ায় জনসেবা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে এলাকাবাসীর মধ্যে।
সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিস সময় নির্ধারণ করলেও সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) বুধবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে অফিসে আগমন করেন। ওই কেন্দ্রেই তার বসবাস করার কথা থাকলেও তিনি রাজাপুর উপজেলা শহরের মেডিকেল মোড়ে ব্যাচেলর বাসা ভাড়া করে থাকেন। ফ্যামিলি কল্যান পরিদর্শক (এফডব্লিউভি) শামসুন্নাহার প্রতি সোম ও বুধবার অতিরিক্ত দায়িত্বে এ কেন্দ্রে সংযুক্ত থাকলেও তিনি সপ্তাহের এ দুদিনও কেন্দ্রে আসেন না।
মাসে ২/৩দিন উপস্থিত হয়ে বাকি সময়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি অফিসে উপস্থিত হন। তিনি তার দায়িত্বও সঠিকভাবে পালন করেন না বলে ওই এলাকার লোকজন অভিযোগ করেন।
বুধবার সকাল ৯টার দিকে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কর্তব্যরত আয়া পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। কিন্তু কেন্দ্র ভবনে ওড়ানো হয়নি জাতীয় পতাকা। ৯টা ৬মিনিটে স্যাকমো রমেন বড়ালকে ফোন দিলে তিনি বলেন আমি বাসা থেকে বের হইছি, আসতেছি। ৯টা ৪০মিনিটে তিনি মটোরসাইকেল যোগে কেন্দ্রে উপস্থিত হন। এসময় তার মটোর সাইকেলের সঙ্গি ছিলেন মাসুদুর রহমান।
স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহিন হোসেনও তার কিছুক্ষণের মধ্যে কেন্দ্রে উপস্থিত হন। স্যাকমো ডা. রমেন বড়ালের কাছে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সেবার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জুলাই মাসের মাসিক প্রতিবেদন দেখান। আগস্ট মাসের সেবার রেজিস্ট্রার খাতা দেখালে তিনি তা দেখাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।
ইতিমধ্যে এফডব্লিউভি শামসুন্নাহার কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। এসময় তিনি বলেন “কি হইছে এখানে, আমি বাহিরে অনেক জরুরী কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমাকে ফোন দিয়ে ডেকে আনা হয়েছে কেন? আমরা আমাদের মতো কাজ করবো, তাও পারছি না। আমাদের কাজে ডিস্টার্ব করা হচ্ছে।” বলে তিনি অন্যদিকে চলে যান।
জুলাই মাসের মাসিক প্রতিবেদন থেকে তথ্য দিতে শুরু করলে তিনি পুনরায় স্যাকমোর কক্ষে ঢুকে তাকে ধাক্কা দিয়ে রিপোর্টের কপি টেনে নিয়ে বলেন “আপনি কার অনুমতি নিয়ে তথ্য দিচ্ছেন, চাইলেই যে কাউকে তথ্য দেয়া যাবে না।
মাসের শুরুতে তথ্য চাইবে, আবার শেষের তথ্য চাইবে, আমাদের বিরক্ত করবে। পারলে অফিস ঠিকমতো চালাবেন, নইলে দরকার নেই।” বলে প্রতিবেদনের কপি নিয়ে চলে যান। স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহিন হোসেন বলেন, এখানে কোন কিছুরই নিয়মনীতির তোয়াক্কা নেই। যে যেমন পারছেন অফিস করছেন। স্কুল ছাত্র রাফি মৃধা জানান, ১১টার দিকে অফিসে আসেন আবার কিছুক্ষণপরে চলে যান।
আমরা অনেক সময় স্কুলে যেতে পথে এ কেন্দ্রে ঢুকে ওষুধ চাইলে লোক না থাকায় আয়া আমাদের দিতে পারছেন না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এনায়েত হোসেন মৃধা জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের লোকজন মাঝে মধ্যে আসেন আবার নিজেদের ইচ্ছায় চলে যান।
রোগী কে আসলো, কে গেলো এসব বিষয়ে তাদের কোন গুরুত্ব নেই। রোগী এলে অনেক সময় বসিয়ে রেখে কাউকে ওষুধ দেয়া হয় আবার কাউকে ওষুধ না থাকার অজুহাত দেখিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
স্থানীয় শাহিন মৃধা জানান, ৩টা পর্যন্ত অফিস টাইম থাকলেও ১টার পরে আর কাউকে এখানে পাওয়া যায় না। সামনের বাজারে প্রায় ১৫টি দোকান আছে। তারা কেউই কেন্দ্রের লোকজনকে ভালো জানেন না। একদিকে যেমন স্বেচ্ছাচারিতা অপরদিকে তেমন খারাপ আচরণ। এজন্য রোগীর সংখ্যাও খুব নগন্য।
ওই কেন্দ্রের পরিদর্শক উজ্জল তালুকদার জানান, আমি মাঠ কর্মীদের তদারকির দায়িত্ব পালন করি। স্যাকমো ওখানে না থেকে তিনি রাজাপুরে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তার কাজেও মন্থর গতি। জনগণের স্বাস্থ্য সেবার মূল ব্যক্তিই হলেন স্যাকমো।
অসুস্থ মানুষ দিয়ে আসলে এধরনের প্রতিষ্ঠানের সেবা দেয়া সম্ভব না। সঠিকভাবে স্বাস্থ্য সেবা না পাওয়ায় স্থানীয় জনগণও এখন আর তেমন আসেন না। স্যাকমো রমেন বড়াল জানান, “সরকার নির্ধারিত অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে তা আমার জানা নেই। আমি ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে তারপরে অফিসে আসতে চাইছিলাম, আপনি ফোন করায় তাড়াতাড়ি আসছি।” চেয়ারম্যান তো ১১টার আগে পরিষদে উপস্থিত হন না।
তাহলে আপনি তার সাথে কথা বলে কখন আসতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তিনি যখন আসতেন তখনই তার সাথে কথা শেষ করে আসতাম।” তিনি আরো জানান, “জাতীয় দিবস সমূহে পতাকা উড়ানো হয়। কিন্তু প্রতিদিন অফিস টাইমে পতাকা ওড়ানো হয় না।” পতাকা এবং পতাকার স্ট্যান্ড দেখতে চাইলে পুনরায় তিনি দেখাতে ব্যর্থ হন।
বিষয়টি অবহিত করতে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শৌরেন্দ্রনাথ সাহার মোবাইল নম্বর পরিদর্শক উজ্জল তালুকদারের কাছ থেকে নেয়া হয়। ওই নম্বরে তিনবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুখ লাল বৌদ্ধ জানান, ওখানকার স্বাস্থ্য সেবার বিষয় নিয়ে আমাদের কাছে স্যাকমো রমেন বড়ালকে শাস্তির পদায়ন দিতে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। আমিও বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। এখন শুধু তা বাস্তবায়নের বিষয়।
Leave a Reply