স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দুই বছরেও তাঁরা আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ পাননি। কে বা কারা পাবেন, সে বিষয়েও তাঁরা কিছু জানেন না।এদিকে ভাঙনের কারণে বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে প্রশাসন।
চর শেফালী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলতাফ মীর সাংবাদিকদের বলেন, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের ফরাজির প্রভাবেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নদীর মোহনায় করা হয়।
ভাঙনপ্রবণ এলাকার বিষয়টি কাদের ফরাজি গুরুত্ব দেননি। এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তৎকালীন ইউএনও সাহেবও চেয়ারম্যানের প্রস্তাবে সায় দিয়ে যান।’ ইউপি সদস্য আলতাফ অভিযোগ করে বলেন, ‘চেয়ারম্যান কারও সঙ্গে পরামর্শ না করেই নদীর মোহনায় প্রকল্পের ঘর তোলার জায়গা ঠিক করেন। আমার ওয়ার্ডে ঘর হলো।
অথচ তিনি কাজের বিষয়ে আমার সঙ্গেও কোনো আলোচনা করেননি।’ একই অভিযোগ করেন পাশের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাজ্জাক মাল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চর শেফালী গ্রামের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, ‘তৎকালীন ইউএনও এবং বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানের খামখেয়ালিপনায় নদীতীরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্থান নির্ধারণ করা হয়।
সেগুলো কারা বরাদ্দ পাচ্ছেন, আমরা জানি না। তবে শুনতে পেয়েছি চেয়ারম্যান তাঁর পরিচিত লোকদের হাতে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন।’
চর শেফালীর পাশের গ্রাম উত্তর সিন্নিরচরের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মুসা বয়াতি বলেন, ‘ভালো-মন্দ মিলিয়ে ৫০ জনের তালিকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একদিকে নদী ভাঙছে, অন্যদিকে বরাদ্দও দেওয়া হচ্ছে না।’
১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য তহমিনা বেগম বলেন, ‘জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চর শেফালী গ্রাম এখন কালাবদর ও মাসকাটা নদীর মোহনায়।
এটি ভাঙনের কবলে। তবে এখনো কেন লোকজন ওঠানো হচ্ছে না, তা চেয়ারম্যানই ভালো জানেন।’ এদিকে জাঙ্গালিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের ফরাজি বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে আপনাগো কি? এর পিছনে লাগছেন কেন? এটা যখন করা হয়েছিল তখন নদী অনেক দূরে ছিল। এবারের বর্ষায় ভেবেছিলাম ঘরগুলো সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাব।
কিন্তু এখন আবার দেখছি নদীভাঙন বন্ধ রয়েছে। তাই নতুন করে লোক ওঠানোর কথা পরিকল্পনা করছি।’ নদীভাঙনের কারণে ঘর সরানোর বিষয়ে ফরাজি বলেন, ‘যখন ভাঙন দেখা দেয় তখন চারটি ঘর সরিয়ে নিয়েছিলাম।’ মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এটা ঠিক যে, ওই সময়ে নদী অনেক দূরেই ছিল।
কিন্তু এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, এখন নদী ভূমির কাছাকাছি চলে এসেছে।’ ভাঙনের বিষয়ে মুজাহিদ বলেন, যেহেতু ঘরগুলো টিনের এবং অ্যাঙ্গল করা, সেহেতু কোনো ঘর নদীভাঙনের কবলে পড়লে ভালো জায়গা দেখে শিফটিং করার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ছিল প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।’
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুন্নবী বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পটি একেবারে নদীর কাছাকাছি। ভাঙনের বিষয়ে ইতিমধ্যেই প্রকল্পের পিডিকে জানানো হয়েছে।
ভাঙনের কারণেই লোক ওঠানোর প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছে।’ ইউএনও নুরুন্নবী আরও বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান তালিকা দিলেই, সে অনুযায়ী ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে না। যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্যরাই পাবেন ঘর। এখানে অনিয়মের সুযোগ নেই।
Leave a Reply