নওগাঁর মান্দায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে তিনদিন থেকে অবস্থান করছেন এক তরুণী (২৩)। তিনি রাজশাহীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রেমিক মিঠুন কুমার (৩২) তাকে বিয়ে না করলে আত্মহত্যার হুমকি দেন ওই তরুণী।
মিঠুন উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের পারইটুঙ্গী গ্রামের বিমল চন্দ্র মণ্ডলের ছেলে। তিনি বদলগাছী উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী কর্মকর্তা বলে জানা গেছে। বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই তরুণী শনিবার (১ অক্টোবর) সকাল থেকে আশপাশের কয়েকটি গ্রামে মিঠুন কুমারের নাম বলে খোঁজ করছিলেন। কিন্তু নাম বা তার গ্রামের সঙ্গে মিল পাচ্ছিল না এলাকাবাসী। বিকেলে পারইটুঙ্গী গ্রামে গিয়ে আবারও মিঠুন কুমারের নাম-পরিচয় বলে খোঁজ করলে এলাকাবাসী তাকে চিনতে পারে। মিঠুনের বাড়ি খুঁজে পেতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। এরপর মিঠুনের বাড়ির দরজার সামনে অবস্থান করেন ওই তরুণী।
এসময় মিঠুনে বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন। কিন্তু কিছু সময় পর তারা বাড়ির দরজায় তালা দিয়ে সটকে পড়েন। তবে মিঠুনের বাবা বিমল চন্দ্র বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে স্থানীয়দের বলে যান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
তার স্ত্রী ও ছেলে ভালো বলতে পারবেন। গত তিনদিন থেকে তরুণী মিঠুনের বাড়ির দরজার সামনে অবস্থান করছেন। দিনে মিঠুনের বাড়ির দরজায় অবস্থান করলেও রাতে তার প্রতিবেশী সুকেশ চন্দ্র মণ্ডলের বাড়িতে অবস্থান করেন তিনি। প্রতিবেশীরা তাকে খাবার দিয়ে সহায়তা করছেন।
ভুক্তভোগী তরুণী জানান, তার বাড়ী রাজশাহীর তানোর উপজেলায়। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। প্রায় এক বছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে মিঠুন কুমারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
এ পরিচয়ের একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এ সূত্র ধরে মিঠুন রাজশাহী শহরে তার সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন।
শেষে গত ২২ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে মিঠুন তাকে রাজশাহী শহরের বোয়ালিয়া থানার পাশে একটি ছাত্রাবাসে নিয়ে যান। ওই ছাত্রাবাসে থেকে তার মামাতো ভাই রকি লেখাপড়া করতেন। ওই রাতে তিনি ও মিঠুন এক কক্ষে রাত্রিযাপন করেন। এসময় বিয়ের প্রলোভনে মিঠুন তার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেন।
ওই ছাত্রী অভিযোগ করে আরও বলেন, ওই ঘটনার পর থেকে মিঠুন তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন এবং ফোনও রিসিভ করেন না। এরপর অনেক কষ্ট করে মিঠুনের বাড়ির নম্বর সংগ্রহ করে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানান।
কিন্তু তিনি ছাত্রীর কথা না শুনে উল্টো গালাগালি করেন। এ অবস্থায় অনেক কষ্টে মিঠুনের গ্রামের ঠিকানা সংগ্রহ করে বিয়ের দাবিতে সেখানে অবস্থান করছেন তিনি। মিঠুন বিয়ে না করলে আত্মহত্যা করারও হুমকি দেন ওই তরুণী।
এ বিষয়ে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই তরুণীকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তরুণী বিয়ের দাবিতে অনড়। অবস্থা বিবেচনা করে গ্রাম পুলিশের পাহারায় প্রতিবেশী সুকেশ চন্দ্র মণ্ডলের বাড়িতে রাখা হয়েছে। প্রতিবেশীসহ আমরা তাকে খাবার দিয়ে সহযোগিতা করছি।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে মোবাইলফোনে অভিযুক্ত মিঠুন কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তরুণী তার বাড়িতে অবস্থান করছেন জানিয়ে প্রশ্ন করা হলে পরে কথা বলবেন বলে জানি ফোন রেখে দেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ইবনু সাব্বির আহমেদ বলেন, মিঠুন কুমার তিনদিনের ছুটিতে আছেন। এছাড়া ওই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, ওই তরুণীকে বুঝিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তার একই কথা, বিয়ে না করা পর্যন্ত সেখান থেকে সরবেন না।
তরুণীর পরিবারে যোগাযোগ করে তার ভাইয়ের সঙ্গে কথাও হয়েছে। পারিবারিকভাবে তারা কথা বলে বিষয়টি সমাধানের পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমাধান করা যায় কী না তা দেখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তরুণী সেখানেই অবস্থান করছেন।
Leave a Reply