1. faysal.rakib2020@gmail.com : admin :
  2. ukbanglatv21@gmail.com : Kawsar Ahmed : Kawsar Ahmed
টাকার অভাবে ক্রিকেট ছেড়েছেন অলরাউন্ডার খাদিজা - বাংলার কন্ঠস্বর ।। Banglar Konthosor
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:৫০ অপরাহ্ন

টাকার অভাবে ক্রিকেট ছেড়েছেন অলরাউন্ডার খাদিজা

  • প্রকাশিত :প্রকাশিত : শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৩৪ 0 বার সংবাদি দেখেছে
মাত্র ৬ বছর বয়সে বাবাকে হারান খাদিজা আক্তার। মা সালেহা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে যুগিয়েছেন ৫ ভাই-বোনের ভরণপোষণ। দরিদ্র মায়ের পক্ষে সন্তানদের লেখাপড়া করানোর সার্মথ্য ছিল না। খাদিজা যখন থেকে বিষয়টি বুঝতে শুরু করে, শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম।

অন্যের জমিতে কৃষাণ দিয়ে করেছেন উচ্চ মাধ্যমিক পাস। পাশাপাশি তিনি একজন অলরাউন্ডার ক্রিকেটার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি করেন অফ স্পিন বল। খেলেছেন বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায়। পুরস্কার হিসেবে তার ঝুলিতে রয়েছে বেশ কিছু মেডেল। তবে অর্থের অভাবে ছেড়ে দিয়েছেন খেলাধুলা। পড়াশোনা শেষ করে মাকে নিয়ে একটু ভালো থাকার আশায় এখনো শত চেষ্টা করে যাচ্ছেন সংগ্রামী এই তরুণী।

 

খাদিজা আক্তারের বয়স এখন ১৮ ছুঁই ছুঁই। বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাসার ইউনিয়নের উপুরগাঁও গ্রামে। বাবা সিরাজ শেখ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন। ৫ ভাই-বোনের মধ্যে খাদিজা আক্তার চতুর্থ। বাবা মারা যাওয়ার পর মা সালেহা বেগম হাল ধরেন সংসারের। খাদিজা স্কুলে যাওয়ার পর পড়াশোনার খরচ যোগাতে ৭ বছর বয়স থেকে অর্থের বিনিময়ে মানুষের জমিতে কৃষাণের কাজ শুরু করেন। নিজের প্রচেষ্টায় ২০২০ সালে আংগারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ২০২২ সালে সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।

খাদিজা আক্তার ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা ভীষণ পছন্দ করতেন। জেএসসি পরীক্ষা শেষে ক্রিকেট খেলতে ভর্তি হন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ স্টেডিয়াম, শরীয়তপুরে। পড়াশোনার পাশাপাশি চালিয়ে যেতে থাকেন খেলাধুলা। খেলেছেন রংপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ময়মনসিংহ ও ঢাকায়। সর্বশেষ অনূর্ধ্ব -১৯ নারী ক্রিকেটে অংশ নিতে বাছাইপর্বে গিয়েছিলেন সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে। তবে বর্তমানে অর্থের অভাবে থমকে গিয়েছে তার খেলাধুলা। যেখানে পেট চালানোই দায়, সেখানে খেলাধুলা তার জন্য বিলাসিতা মাত্র।

jagonews24

এছাড়া এতদিন খাদিজার কলেজে যাওয়ার জন্য ছিল একটি বাইসাইকেল। চলতি মাসের ৫ তারিখে সেটি চুরি হওয়ায় পড়েছেন আরও বিপাকে। সাইকেলটির অভাবে খাদিজার কলেজে যাওয়াই এখন দায়। থাকার একমাত্র ঘরটির অবস্থা নাজুক। বৃষ্টিতে টিনের চালার ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে বই-খাতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাকে নিয়ে উঠেছেন তুলাসার ইউনিয়নের রংয়ের বাজার সংলগ্ন এলাকায় মেজো বোন শাহিদা আক্তারের সরকার থেকে পাওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে।

ভাই মিরাজ শেখ বিয়ের পর আলাদা ভাড়া বাসায় থাকেন নিজের পরিবার নিয়ে। আর মা সালেহা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংসারের দায়িত্ব সম্পূর্ণ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন খাদিজা।

 

খাদিজা আক্তার বলেন, আমাদের এই কষ্ট দেখার কেউ নেই। ছোটবেলা থেকে খুব কষ্ট করে বড় হয়েছি। মানুষের জমিতে ফসল কেটে, ক্ষেত নিড়ানোর কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই চালিয়েছি। খেলাধুলা ভীষণ পছন্দ করতাম বলে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাকেও ধরে রেখেছিলাম। একটানা ২ দিন না খেয়েও প্র্যাকটিসে গিয়েছি। তবে টাকার অভাবে ৯ মাস ধরে খেলাধুলা বাদ দিয়েছি। খেলতে গেলে আমার মাকে না খেয়ে থাকতে হয়।

তিনি বলেন, টাকা জমিয়ে একটা সাইকেল কিনেছিলাম, ওটা চালিয়েই স্কুল আর কলেজে গিয়েছি। কয়েকদিন আগে মাকে ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে যাওয়ার পর আমার সাইকেলটি সেখান থেকে চুরি হয়ে যায়। কিছুদিন আগে ডিগ্রি ভর্তির জন্য ফরম পূরণ করেছি, এখন সাইকেলের অভাবে কলেজে যাওয়াই কষ্ট।

স্থানীয় বাসিন্দা আকলিমা আক্তার বলেন, মেয়েটি খুবই কর্মঠ। নিজে কাজ করে মাকে নিয়ে কোনোমতে খেয়ে-পরে বেঁচে আছে। একসময় ক্রিকেট খেলতো, এখন টাকার অভাবে আর খেলতে পারে না। যদি সরকার ওর পাশে দাঁড়ায় তাহলে ওর পরিবারটা একটু ভালো থাকতে পারবে।

উজ্জ্বল সরদার নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, মেয়েটা সংসার চালানোর পাশাপাশি নিজেই পড়াশোনা করে এতদূর আসতে পেরেছে। এটা সত্যিই অবাক করার মতো। সরকার থেকে ওর জন্য যদি একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতো তাহলে ও পরিবার নিয়ে দু’বেলা খেয়ে-পরে বাঁচতে পারতো।

শরীয়তপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ স্টেডিয়ামের ক্রিকেট কোচ সেলিম শিকদার বলেন, খাদিজা আক্তার আমাদের এখানে নিয়মিত ক্রিকেট খেলতো। বেশ ভালো খেলতো মেয়েটা। অন্যান্য মেয়েদের সঙ্গে ও বিভিন্ন জেলায় খেলায় অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়াও ফার্স্ট ডিভিশন খেলতে ঢাকায় গিয়েছিল, অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলতে ট্রায়ালেও গিয়েছিল। তবে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে এখন আর মেয়েটি খেলতে আসে না।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যৌতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, আমরা এরইমধ্যে খাদিজার বিষয়ে জানতে পেরেছি। মেয়েটি ছোটবেলা থেকে খুব সংগ্রাম করে নিজের পড়াশোনা চালানোর পাশাপাশি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা মেয়েটির বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Comments are closed.

‍এই ক্যাটাগরির ‍আরো সংবাদ