বিশেষ প্রতিনিধি // বরিশাল জেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ভয়াল মেঘনা ঘেরা দুটি উপজেলা হচ্ছে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ। এ দুটি জনপথ নিয়েই বরিশাল-৪ সংসদীয় আসন। হিজলা উপজেলাকে আসনটির সাথে সম্পৃক্ত করা হয় ২০০৮ সালে। এ আসনের ভোটারদের দেশের চলমান ধারার বিপরীতে যাওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে। ১৯৯১ সালে বিএনপি যখন সরকার গঠন করে তখন এখানে ভোটে জেতেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মহিউদ্দিন আহমেদ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শাহ মোহাম্মদ আবুল হোসাইন আবার ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ যখন সরকার গঠন করে তখন সাংসদ নির্বাচিত হন বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ। এই আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী পংকজ নাথ। এখানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আ’লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও চরমোনাইর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাপ ততই বাড়ছে। বরিশালের গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে বিবেচিত করা হয় আসনটিকে। আসনটির দিকে দৃষ্টি অনেক নেতার। বড় দুই দলসহ ২৪জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর পদচারণায় জমে উঠেছে আসনটির নির্বাচনী রাজনীতি। দুদলেরই পুরাতন প্রার্থীদের পাশাপাশি নতুন সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নির্বাচনী মাঠ গরম করতে মাঠে নেমেছে। উভয় দলে মনোনয়ন প্রত্যাশীর ছড়াছড়ি। মনোনয়ন পেতে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে হবে মূল লড়াই। আসনটিতে ভাগ বসাতে গোপনে মাঠে তৎপর রয়েছে জামায়াতও। জামায়াতও চায় আসনটিতে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন ১০জন নেতা। এরা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মি আহমেদ, বর্তমান সাংসদ পংকজ নাথ, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাডঃ আফজালুল করিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, মাইটিভির ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দীন সাথী, বরিশাল জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঈদুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা হেমায়েত উদ্দিন খান হিমু, মেজর (অব) মহসিন সিকদার, মেজর (অবঃ) নাসির উদ্দিন, লায়ন মুজিবুর রহমান হাওলাদার, এদের মধ্যে বর্তমানে শক্ত অবস্থান নিয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মি আহমেদ, এই আসনের ৩টি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা প্রার্থী পরিবর্তনের পক্ষে। তারা স্থানীয় সাংসদ পংকজ নাথকে এড়িয়ে চলছেন। দলীয় নেতাকর্মীরা পংকজ নাথকে এড়িয়ে চলার কারন জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মোতালেব জাহাঙ্গীর বলেন, বর্তমান সাংসদ পংকজ নাথকে দলের সকল পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে দল,এছাড়াও দলীয় সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তাই তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন কি না তা আমার জানা নেই। তার হাতে ১২ জন দলীয় কর্মী খুন হয়েছে, দুটি উপজেলাসহ ১৫টি ইউপি পরিষদ নির্বাচনে নৌকা ডুবিয়েছে। পংকজ নাথকে ছাড়া দল যাকে মনোনয়ন দিবে সেই এখান থেকে বিজয় হবে। উপজেলা কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক এইচ এম নোমান বলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গণমানুষের কল্যাণে রাজনীতি করে যাচ্ছেন ড. শাম্মি আহমেদ। ‘আওয়ামীলীগের সঙ্গে তাদের পরিবারের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। মেহেন্দিগঞ্জের মাটি ও মানুষের উন্নয়নে শাম্মি আহমেদ এর পিতা প্রয়াত সাংসদ মহিউদ্দিন আহমেদ রাজনীতি করেছিলো। পিতার ন্যায় শাম্মি আহমেদও সারাজীবন রাজনীতি করতে চায়। এই আসনে বিএনপির ৬জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। এরা হলেন, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, জিয়া পরিবারের আইনজীবী বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা এ্যাডঃ এম হেলাল উদ্দিন, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক দেওয়ার শহিদুল ইসলাম, যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল খালেক হাওলাদার, নুরুর রহমান জাহাঙ্গির, এদের মধ্যে মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, রাজীব আহসান ও এ্যাডঃ এম হেলাল উদ্দিন আলোচনায় রয়েছেন। এই বিষয়ে হেলাল উদ্দিন এর অনুসারী সুজন হাওলাদার বলেন ৩জন আলোচনায় থাকলেও হেলাল উদ্দিন স্থানীয় বিএনপির গ্রুপিংয়ের উর্ধে থাকায় তার উজ্জ্বল সম্ভবনা রয়েছে। অন্যদের পিছনে ফেলে মনোনয়ন পেতেও পারেন। আরও বলেন, হেলাল উদ্দিন দীর্ঘদিন এই আসনের নির্যাতিত বিএনপির পাশে দাড়িয়েছিলেন, তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই অঞ্চলে বেশ কিছু কুয়েতি সংস্থার মসজিদ নির্মান করা হয়, দান অনুদান, শীতবস্ত্র বিতরণ, ঈদে সেমাই চিনি ও নতুন পোষাক বিতরণ করে মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন। এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী পীরসাহেব হুজুরের ছোট ভাই মুফতি সৈয়দ এছাহাক মোহাম্মদ খায়ের। জামায়াত ইসলাম আগেই তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। ঘোষিত প্রার্থী বিশিষ্ট আলেম মাওলানা আবুল হাশেম বশির উল্লাহ। এই আসনে জাতীয় পার্টির একমাত্র মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটির সদস্য বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান। তিনি এখানে জাতীয় পার্টির শক্ত ভীত তৈরি করতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। নতুন ধারা বাংলাদেশ (এনডিবি)’র চেয়ারম্যান সাংবাদিক মোমিন মেহেদীও নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন, তবে তার দল শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন না পেলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লড়বেন বলে জানান বাংলার কন্ঠস্বর’র স্থানীয় প্রতিনিধিকে। দুটি উপজেলা, ৩টি থানা, একটি পৌরসভা ও ২২টি ইউনিয়ন নিয়ে বরিশাল -৪ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৩৮৬৫০৬ । এর মধ্যে হিজলা উপজেলায় ১০২০০০ এবং মেহেন্দিগঞ্জে ২৮৪৫০৬ ভোটার। গত তিনটি নির্বাচনে আসনটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ২বার এবং জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ১বার। আওয়ামীলীগ চায় তৃতীয়বারের মতো আসনটি ধরে রাখতে। আর বিএনপি চায় হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। তবে একাধিক প্রার্থিতার কারণে আসনটিতে বড় দুই দলেই দ্বন্দ্ব-বিভেদ রয়েছে। বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর পাকবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে পাকিস্তান কারাগারে নির্যাতিত প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমেদ ২বার এখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারই কন্যা ড. শাম্মি আহমেদ তার বাবার দেখানো পথে হাটছেন।