1. faysal.rakib2020@gmail.com : admin :
  2. ukbanglatv21@gmail.com : Kawsar Ahmed : Kawsar Ahmed
ভাগায় বিক্রি হচ্ছে মাছ মাংস সবজি - বাংলার কন্ঠস্বর ।। Banglar Konthosor
মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০১:০৯ পূর্বাহ্ন

ভাগায় বিক্রি হচ্ছে মাছ মাংস সবজি

  • প্রকাশিত :প্রকাশিত : বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৩২ 0 বার সংবাদি দেখেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক // রাজধানীর তেজগাঁও থানার তেজকুনিপাড়ার ফকিন্নি বাজারে ভাগায় বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস, সবজি, মুদি সামগ্রীসহ সবকিছু। এ যেন গরিবের সুপারশপ। মাত্র ১০ টাকা ভাগায় কিনছে সবছি, ৫০ টাকা ভাগায় পাওয়া যাচ্ছে মাছ, ১০০ গ্রাম থেকে শুরু করে বিক্রি হচ্ছে মাংস।

আধাকেজি চালও বিক্রি হয়। ডাল, হলুদ, মরিচসহ বিভিন্ন পণ্য ১০ থেকে ২০ টাকার প্যাকেট করা থাকে। কেউ ১০০ টাকা নিয়ে সেখানে গেলে একবেলার বাজার করতে পারেন। নিম্নবিত্তসহ সব শ্রেণির মানুষ আসে এখানে। দিনে দিনে ভিড় জমে উঠছে ফকিন্নি বাজারে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে টাকা সাশ্রয় করতে ক্রেতাদের এই বাজারে আসতে হচ্ছে। স্বস্তি নিয়েই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা এখানে বাজার করছে।

বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম দিন দিন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বিকল্প পন্থা খুঁজতে হচ্ছে। কেউ খাওয়া কমিয়েছে, কেউ অর্ধেক পণ্য কিনছে, কেউ আবার মাছ-মাংস কেনা বাদ দিয়ে ডাল-ভাত, সবজি দিয়েই পেট ভরছে। তবু সপ্তাহে অন্তত একটি দিন পরিবারের সদস্যদের মুখে মাছ কিংবা মাংস তো দিতে হয়, কিন্তু যে দাম তাতে সামর্থ্যে কুলায় না।

সেই চিন্তা থেকেই তেজগাঁওয়ের বিজয় সরণি সড়কের নিচে গড়ে উঠেছে ফকিন্নি বাজার। নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ নিয়মিত এখান থেকে বাজার করে। অধিকাংশ ক্রেতাই ওই এলাকার দিনমজুর, কারখানা শ্রমিক কিংবা রিকশাচালক। তারা অল্প অল্প করে প্রতিদিনের বাজার প্রতিদিন করেন।

তবে অনেক ক্রেতাই বলছেন, এমন বাজার দেশের সব স্থানে থাকলে ভালো হতো। আমাদের পাশের দেশ ভারতে যার যতটুকু প্রয়োজন সে ততটুকু কিনছে। কিন্তু আমাদের দেশে এটা নেই। দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বগতিতে যারা আস্ত মাছ-মাংস কিনতে পারছে না তাদের কী করা উচিত।

তাদের সন্তানদের কি আমিষের প্রয়োজন নেই? আবার অল্প কিছু কিনতে গেলে দোকানিরা তা দিতে চায় না। যাদের আস্ত মাছ কিংবা মুরগি কেনার সামর্থ্য নেই তারা কী করবে। তাই ভাগা করে বা যার যতটুকু প্রয়োজন তাকে ততটুকু দেওয়ার নিয়ম হলে সবাই তাদের প্রয়োজন অনুসারে কিনতে পারবে।

অভাবের সংসারে যেন অভাব দিয়েই কেটে যায়। দিন যায়, মাস যায়, তবু অভাব ফুরিয়ে যায় না। এমনি অভাব না ফুরানোর সংসার পারভীন বেগমের। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, যে জিনিসের দাম একবার বেড়ে যায় তা আর কমে না। এ যেন এ দেশের প্রথা।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে যেন কারও মাথাব্যথাই নেই। তবুও কিছুটা স্বতিতে রয়েছেন তিনি। ১০০ টাকা নিয়ে বাজারে এসে তিনি ৯০ টাকার বাজার শেষ করেছেন। ভাগায় ১০ টাকার কাঁচা মরিচ, ১০ টাকার করলা, ১০ টাকার বরবটি, ১০ টাকার মসুর ডাল ও ৫০ টাকার কাঁচকি মাছ কিনেছেন পারভীন বেগম।

সরেজমিন দেখা গেছে, ফকিন্নি বাজারে ঢোকার মুখে ভিড়। বাজারে বেশির ভাগ ক্রেতা ও বিক্রেতা বয়সি নারী। বিক্রেতারা রাতে কারওয়ান বাজার থেকে অল্প দামে সবজি কিনে সকাল থেকে ভাগা দিয়ে বিক্রি করছে। ১০ টাকা ভাগায় কাঁচামরিচ, বেগুন, বরবটি, করলা, টমেটো, চিচিঙ্গাসহ সব সবজি বিক্রি করা হচ্ছে। ৩০ টাকা হালিতে একটু ভাঙা ডিম, ৫০ টাকা ভাগায় মাছ ও ১০০ গ্রাম থেকে শুরু করে মাংস বিক্রি করছে। এ ছাড়াও ১০ টাকার বিভিন্ন মুদি সামগ্রীর প্যাকেট করে রাখা হয়েছে। যার যতটুকু প্রয়োজন সে ততটুকু কিনছে।

নুরজাহান নামের এক বৃদ্ধা বলেন, কারওয়ান বাজার থেকে কিছু সবজি কিনে নিয়ে এখানে বিক্রি করছি। দিনে ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মতো সবজি বিক্রি করি। সবজির যে দাম সবাই ওই দামে কিনতে পারে না। তাই এখান থেকে মানুষ ভাগা হিসেবে কিনছে।

আয়শা বেগম নামের এক মুদি দোকানি বলেন, আমার এখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু প্যাকেট করে রাখা আছে। ১০ টাকা, ২০ টাকা ও ৩০ টাকার প্যাকেট রয়েছে। যার যতটুকু প্রয়োজন সে ততটুকু কেনে। দিনে ১ হাজার ৫০০ টাকার মতো বিক্রি হয়। তা দিয়েই আমরা সংসার চলে। আয়শা বেগম আরও বলেন, যারা দিনমজুর তারাই কিনতে আসে। এখান থেকে পণ্য কিনে তারা সুবিধা পায়। মধ্যবিত্তরাও এখান থেকে পণ্য নেয়।

দেখা যায়, রাজধানীর অন্য বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়, বেগুন ১০০ টাকা, সিম ২০০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা ও গাজর ১২০ টাকা। কিন্তু এ বাজারে তারা এত কমদামে কীভাবে সবজি বিক্রি করেন জানতে চাইলে কবির হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, কারওয়ান বাজার থেকে সবাই বেছে বেছে ভালো সবজিগুলো কিনে নিয়ে যায়। এরপর যা অবশিষ্ট থাকে তা আমরা কম টাকায় ঠিকা দরে কিনে নিই। পরে সেগুলোই কম দামে বিক্রি করি। অল্প লাভে বিক্রি করে দিই।

ভাগায় মাছ বিক্রেতা আল আমিন জানান, মাছের যে দাম তাতে সবাই কিনতে পারে না। এখন পাঙাশ মাছও ২৩০ টাকা কেজি। তাই প্রতিদিন সকালে কারওয়ান বাজার থেকে অল্প করে মাছ কিনে এখানে ভাগা দিয়ে বিক্রি করি। এ ছাড়াও যে যতটুকু নিতে চায় তাকে ততটুকু দেওয়া হয়।

গরুর মাংস বিক্রেতা দ্বীন ইসলাম বলেন, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। এই দাম দিয়ে সবার পক্ষে কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই ২৫০ গ্রাম বা যার যতটুকু প্রয়োজন তার কাছে ততটুকু বিক্রি করছি। একই অবস্থা মুরগির মাংসের ক্ষেত্রেও। আবার মুরগির পা, মাথা ও কলিজাও বিক্রি হচ্ছে ভাগা দিয়ে।

মো. সিরাজুল ইসলাম ডিম বিক্রি করেন। ৩০ টাকা দিয়ে তার কাছ থেকে এক হালি ডিম কেনা যায়। তবে পরিবহনের সময় যেসব ডিম ভেঙে যায় সেই ডিম এই দামে কিনতে পারেন ক্রেতারা। এ ছাড়া ছোট আকারের ডিম ১২০ টাকা ডজন বিক্রি করেন। অনেকেই ভাঙা ডিম কেনেন। সিদ্ধ করে খেতে না পারলেও তা ভেজে খাওয়ার জন্য নিয়ে যান।

তোবারক ইসলাম নামের এক রিকশাওয়ালা এখানে প্রতিদিন বাজার করেন। তিনি বলেন, আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মাছ-মাংস ও সবজির যে দাম বাড়ছে তাতে আমরা আর পারছি না। ছেলে-মেয়েদের মুখে খাবার দিতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে এ বাজার থেকে কিছুটা স্বস্তিতে বাজার করি। অল্প অল্প করে প্রয়োজনমতো কিনতে পারি। তাই এখান থেকে প্রায়ই বাজার করছি।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Comments are closed.

‍এই ক্যাটাগরির ‍আরো সংবাদ