নিজস্ব প্রতিবেদক // বরিশালে বিল্ডিং কোড ও প্ল্যান না মেনেই নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। এতে ভূমিকম্পসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে নগরবাসীর জানমালের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। প্রকৌশলীরা জানান, অসৎ কিছু প্রকৌশলী ও বিল্ডিং ডিজাইন ফার্ম গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিতে সয়েল টেস্ট ও বিধি নিষেধের তোয়াক্কা না করেই বাড়ির নামে মরণফাঁদ বানিয়ে দিচ্ছে। তবে দ্রুত বাড়ি নির্মাণে অনিয়মের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন সিটি মেয়র।
গত ২ ডিসেম্বর সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো কয়েক সেকেন্ডের ভূমিকম্প অনুভব করে দক্ষিণাঞ্চলবাসীও। এ সময় অনেকেই ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান। আশ্রয় নেন খোলা জায়গায়। আতঙ্কিত বাসিন্দাদের বেশিরভাগ বহুতল ভবনের বাসিন্দা।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, নগরীতে মোট ভবন আছে প্রায় ৫২ হাজার। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে ৩৭টি। আর গত ৫ বছরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৫ হাজার ৩০০ টি।
ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরীতে নির্মাণাধীন ভবনগুলোর বেশিরভাগই বিল্ডিং কোড ও প্ল্যান না মেনেই নির্মিত হচ্ছে। অসৎ কিছু প্রকৌশলী ও বিল্ডিং ডিজাইন ফার্ম গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিতে সয়েল টেস্ট ও বিধি নিষেধের তোয়াক্কা না করেই বাড়ির নামে মরণ ফাঁদ বানিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
বরিশাল বিল্ডিং ডিজাইন সিস্টেমের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার গোপাল চন্দ্র রায় বলেন, ‘বরিশাল নগরীতে আগে ৪ থেকে ৫ তলার বেশি উঁচু ভবন নির্মাণ না হলেও সম্প্রতি ১০ তলার ওপর উঁচু ভবনগুলো নির্মাণ হতে শুরু করেছে। তবে দুঃখের বিষয় নির্মাণাধীন ভবনগুলোর বেশিরভাগই বিল্ডিং কোড ও প্ল্যান না মেনেই নির্মিত হচ্ছে। এটা অনেক বড় ঝুঁকিতে ফেলতে পারে পুরো বরিশাল নগরীকে।
বরিশাল দি মেগা বিল্ডার্সের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সাইমন ইসলাম বলেন, ‘অসৎ কিছু প্রকৌশলী ও বিল্ডিং ডিজাইন ফার্ম গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিতে সয়েল টেস্ট ও বিধি নিষেধের তোয়াক্কা না করেই ভবন নির্মাণ করছে। পাড়া মহল্লায় যত্রতত্র গড়ে ওঠা বিল্ডিং ডিজাইন ফার্মগুলোর মান যাচাই না করেই বাড়ির মালিকদের কম টাকায় ভবন নির্মাণ থেকে সরে আসতে হবে। না হলে ভবিষ্যৎ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এসব ভবন বরিশালের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।’
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, মাস্টার প্ল্যান ও সিটি করপোরেশনের বিধিনিষেধ না মেনে নির্মিত ভবনগুলো ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে নগরবাসীর ঝুঁকির কারণ হবে। অন্যদিকে দ্রুত বাড়ি নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান সিটি মেয়র। নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মিলন মণ্ডল বলেন, ‘মাস্টার প্ল্যান ও সিটি করপোরেশনের বিধিনিষেধ না মেনে নির্মিত ভবনগুলো ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে নগরবাসীর ঝুঁকির কারণ হবে। এখনই যদি সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে এই নগরী কংক্রিটের বস্তিতে পরিণত হবে।’
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) বলেন, ‘বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার পাশাপাশি যারা ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ করবে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ বরিশাল নগরীতে প্রায় শতাধিক বাড়ি নির্মাণের ডিজাইন ফার্ম রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধশত ফার্মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।